শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ০৭:২১ অপরাহ্ন
ঈদে নারীর টানে বাড়ি এসে ফিরতি টিকিট নিয়ে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন বারহাট্টা উপজেলার অর্ধেকেরও বেশি মানুষ। চলছে শুধু টিকিটের হাহাকার, চারিদিকে শুধু নাই নাই শব্দ। কর্তৃপক্ষ অগ্রীম টিকিট প্রদানের ব্যবস্থা করলেও সঠিক ভাবে মনিটরিং না থাকায় খুব কম মানুষ এর সুফল ভোগ করছে বলে নানান অভিযোগ উঠেছে উপজেলা রেলওয়ে কতৃপক্ষের বিরুদ্ধে।
নেত্রকোনার মোহনগঞ্জ রেলস্টেশন থেকে বারহাট্টা রেল স্টেশন হয়ে প্রতিদিন দুইটি আন্তনগর ট্রেন চলাচল করে একটি হলো হাওর এক্সপ্রেস ও অন্যটি মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস। এই দুইটি ট্রেনেই মোহনগঞ্জ টু ঢাকা। দুইটি আন্তনগর ট্রেনে সব মিলিয়ে বারহাট্টা উপজেলা রেল স্টেশনের জন্য বরাদ্দ করা আসনের সংখ্যার তুলনায় যাত্রীর চাপ থাকে পাঁচ থেকে ছয় গুণ বেশি। করোনার জন্য কাউন্টারের পরিবর্তে অনলাইনে টিকিট বিক্রি হচ্ছে। ফলে ডিজিটাল কায়দায় কালোবাজারে টিকিট বিক্রি করে মুনাফা লুটছে বারহাট্টা উপজেলা রেলওয়ের একটি মহল।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, টিকিট সংকটের সুযোগ কাজে লাগিয়ে রেলওয়ের কালোবাজারিরা বেশ সক্রিয়। কাউন্টারে টিকিট বিক্রি বন্ধ থাকায় তাঁরা অনলাইনে ভিন্ন ভিন্ন পরিচয়পত্র (আইডি) ও মুঠোফোন নম্বর ব্যবহার করে টিকিট সংগ্রহ করে চড়া দামে সাধারণ যাত্রীদের কাছে বিক্রি করছেন তারও অনেক প্রমাণ রয়েছে। তাঁদের দৌরাত্ম্যের কারণে যাত্রীরা এখন জিম্মি মুখে। বছরে দু-একবার অভিযান চালিয়ে নেত্রকোনা জেলার কয়েকজন কালোবাজারিকে আটক করা হলেও অধিকাংশ ব্যক্তিরা থাকছেন ধরা-ছোঁয়ার বাইরে।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, অনলাইনে টিকিট ছাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কালোবাজারি চক্র ভিন্ন ভিন্ন আইডি ও মুঠোফোন নম্বর ব্যবহার করে টিকিট কেটে রাখে। ফলে সাধারণ যাত্রীরা অনলাইনে কিংবা অ্যাপসের মাধ্যমে টিকিট কাটার চেষ্টা করে বেশির ভাগ সময় ব্যর্থ হন। পরে কালোবাজারে টিকিটি কাটতে বাধ্য হন। এ ছাড়া ট্রেনের যাত্রীদের বড় একটি অংশ অনলাইন সুবিধার বাইরে। ফলে তাঁদেরও বাধ্য হয়ে বেশি দামে কালোবাজারে টিকিট কাটতে হয়। ট্রেনের টিকিট কাটায় ডিজিটাল এই কায়দা কাজে লাগিয়ে মুনাফা লুটে নিচ্ছেন বারহাট্টা উপজেলা রেলওয়ের কালোবাজারিরা।
সোমবার সকালে মাহমুদুল আলম নামের ঢাকাগামী এক যাত্রী বলেন, ১০ দিন আগে অগ্রিম টিকিট ছাড়া হলেও কয়েক মুহূর্তেই ট্রেনের টিকিট শেষ হয়ে যায়। শাহাদাৎ হোসেন নামের অপর এক যাত্রী বলেন, ভাগ্য ভালো থাকলে অনলাইনে টিকিট পাওয়া যায়, তবে সেটা কঠিন ব্যাপার। এ জন্য তিনি কাউন্টারে সব টিকিট উন্মুক্ত করে দেওয়ার দাবি জানান।
মোহনগঞ্জ রেলস্টেশন সূত্র জানায়, এই করোনাকালে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতেই অনলাইনে টিকিট বিক্রি করা হচ্ছে। সেই হিসেবে সব মিলিয়ে ঢাকাগামী মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেসে ১৯৬টি, ও হাওর এক্সপ্রেসে ১৭৮,টি আসন মোহনগঞ্জের যাত্রীদের জন্য বরাদ্দ রয়েছে।
একজন বেসরকারি চাকরিজীবী মঞ্জরুল হান্নান বলেন, অনলাইনে টিকিট পাওয়া যায় না। কিন্তু বিভিন্ন ফেসবুক গ্রুপে টিকিট পাওয়া যায়। সেসব টিকিট নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে অনেক বেশি দামে বিক্রি করা হয়। আবার সুযোগ বুঝে একই টিকিট কম্পিউটার প্রিন্টারে ছাপিয়ে একাধিক ব্যক্তির কাছে বিক্রি করারও অভিযোগ রয়েছে। এ নিয়ে প্রায়ই ট্রেনের টিটিইদের সঙ্গে যাত্রীদের বাগ্বিতণ্ডা হচ্ছে।
বারহাট্টা স্টেশনের নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক রেলওয়ে কর্মচারী বলেন, সম্প্রতি টিকিট কালোবাজারি রোধে জাতীয় পরিচয়পত্র অথবা জন্ম নিবন্ধন সনদের মাধ্যমে পরিচয় নিশ্চিত সাপেক্ষে টিকিটে যাত্রীর নামসহ টিকিট বিক্রি শুরু করেছে বারহাট্টা রেল কর্তৃপক্ষ। কিন্তু এভাবে চলন্ত ট্রেনে টিকিট চেকিং কার্যক্রম অনেক সময় সাপেক্ষ বলে এর সুফল পাওয়া সম্ভব হয়নি। ফলে এ সুযোগে কালোবাজারির মাধ্যমে একজনের টিকিট দিয়ে আরেকজন যাত্রী হরহামেশাই ভ্রমণ করছেন।
মোহনগঞ্জ থেকে প্রতিদিনেই ময়মনসিংহ ও ঢাকাগামী পাচঁটি ট্রেন বারহাট্টা রেলওয়ে স্টেশন হয়ে ময়মনসিংহ ও ঢাকায় যাতায়াত করে।
এ বিষয়ে অভিযোগ করে নাগরিক টিভির সিনিয়র প্রযোজক আসিফ রহমান রাজন বলেন,বারহাট্টা রেল স্টেশন থেকে হাওড় এক্সপ্রেস ট্রেনে কবিনের টিকিট কি শুধু মাত্র রেলের ডিসিও ও তার মায়মনসিংহের আত্মীয়দের জন্যই বরাদ্ধ।
ঈদের পর থেকে আজ পর্যন্ত বারহাট্টা রেল স্টেশন থেকে যতবার হাওড় এক্সপ্রসে কেবিনের টিকেট কাটতে আমার ছোট ভাইকে পাঠিয়েছি ততবার বারহাট্টা রেল স্টেশন মাস্টার বলেছে কেবিনের টিকেট রেলের ডিসিও সাখাওয়াত মহসীন সাহেবের নামে বুকিং আছে তার আত্মীয় মায়মনসিংহ থেকে উঠবেন।
আমার কথা হলো রেলে ডিসিও যদি প্রতিদিনই বারহাট্টা রেল স্টেশন থেকে কেবিনের টিকেট তার আত্মীয়র জন্য বা তার নিজের জন্য নিয়ে যান (বারহাট্টা রেল স্টেশন মাস্টারের ভাষ্যমতে)তাহলে বারহাট্টা স্টেশনের নামে কেন এই সিট গুলো বরাদ্ধ দেওয়া হলো, DCO সাখাওয়াত মহসীন সাহেব তো এই টিকেট গুলো তিনি নিজের অফিসে বা তার আত্মীয়দের বাড়ির কোন ঠিকানায় বরাদ্ধ নিয়ে নিতে পারেন বা টিকেটের গায়ে লিখে দিতে পারেন আত্মীয়সিট।
তাহলে আমরা যারা বারহাট্টা থেকে ট্রেন উঠি তারা অন্তত জানবো যে বারহাট্টা স্টেশন থেকে কেবিনের কোন টিকেট দেওয়া হয় না। এই টিকেট শুধু রেলের ডিসিও এবং তার আত্মীয়দের জন্য বরাদ্ধ এবং এই টিকেটের নাম আত্মীয় কেবিন।
আমরা ডিসিও আত্মীয় ও স্ত্রীর আত্মীয়দের চাপ থেকে একটি মুক্ত রেলপথ দেখতে চাই।
ঈদ শেষে ঘরমুখো মানুষ যাতে নির্বিঘ্নে কর্মস্থলে ফিরতে পারে এবিষয়ে বারহাট্টা উপজেলার স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন বারহাট্টা উপজেলাবাসী।
এ অভিযোগের বিষয়ে বারহট্টা রেলওয়ে স্টেশন মাষ্টার গোলাম রব্বানীর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, অনলাইনে ৯০ শতাংশ টিকিট বিক্রি হচ্ছে। তাই টিকিটের চাহিদা বেশি। প্ল্যাটফর্মে কিংবা স্টেশনের অভ্যন্তরে কোথাও কালোবাজারি হয় না। বাইরে অন্য কোথাও কালোবাজারি হয়ে থাকলে এর সঙ্গে কারা জড়িত, তা চিহ্নিত করা কঠিন। তবে রেল কর্তৃপক্ষ কালোবাজারি প্রতিরোধে কঠোর অবস্থানে রয়েছে।
১০.০৫.২০২২ ইং